সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জনবল সংকটে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল

জনবল সংকটে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালসহ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। চিকিৎসক ও দক্ষ জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না আধুনিক যন্ত্রাপাতি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুবছর আগে ২৫০ শয্যায় উন্নতি করণের লক্ষ্যে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে শুরু হয়নি ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতালটি বর্তমানে ১০০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে ৫০ শয্যারও কম।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন চিকিৎসক সংকট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিসহ নানা সমস্যায় ব্যাহত হচ্ছে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করে  অন্য কোনো ক্লিনিক বা বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় করা যাচ্ছে না আলট্রাসোনোগ্রাম ও উন্নতমানের পরীক্ষা, নষ্ট হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। রোগীদের অভিযোগ চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগীও দেখেন না।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোগির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিতে একজন মাত্র টেকনোলজিস্ট কাজ করে। তাই বেলা ১২টার পরে আর কোনো পরিক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া হাসপাতালে কুকুর কামড়ানো ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেয়া হয়। আর সাপে দংশনের ভ্যাকসিন জরুরি বিভাগে রাখা থাকে। রোগী আসলে চিকিৎসক দেখে সংগে সংগে ব্যবস্থা গ্রহন করে চিকিৎসক।
সদর উপজেলার দস্তানাবাদ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সুমাইয়া জানান, সকাল আটটা থেকে ৬ মাসের শিশুকে নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে বসে আছি। দুপুর হয়ে গেলেও দেখা মেলেনি।

নলডাঙ্গা উপজেলার কেশবপুর থেকে আসা মারিয়া বেগম জানান, প্রাইভেটে চিকিৎসা খরচ বেশি। তাই ৫ টাকা টিকিট কেটে সকাল থেকে বসে আছি। তিন ঘন্টা পার হলেও দেখা নাই চিকিৎসকের।হাসপাতালে বহিঃর্বিভাগে চর্ম রোগের চিকিৎসা নিতে আসা কাদের আলী জানান, চিকিৎসক ভিতরে বসে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে আলাপ করছেন। আর মাঝে মধ্যে একজন করে রোগি দেখছেন।

গলার ব্যাথায় কাতর সাহানুর বেগম আবাসিক অফিসার চার্জ প্রাপ্ত ডাঃ এম এ মোমিন এর চেম্বারের সামনে দরজায় বসে আছে দুই ঘন্টা। বসে থাকার কারন জানতে চাইলে প্রতিবেদককে জানান, ডাক্তার মিটিং করছেন।
পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগী পার্বতী রানী জানান, দুইদিন হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছি। শয্যা না পাওয়ায় বারান্দার জায়গা হয়েছে। কিন্তু মেঝেতে আছি তাই চিকিৎসকেরা পরামর্শ না দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। এখন কি করব?

সদর উপজেলার কাফুরিয়া থেকে শিশু ফাহিমকে নিয়ে রবিবার সকালে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন কেয়া। সকল সেবা ঠিক মতো দিলেও রাইচ স্যালাইন ও বায়োকিট নামে দুটি ওষুধ বাহির থেকে কিনেছেন।

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ চন্দনা দেব নাথ বলেন, যে সকল ওষুধের সরবরাহ নেই শুধু সেই ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়। এছাড়া ওষুধের মজুদ আছে। ওয়ার্ডে ১৪ শয্যার বিপরীতে রোগি ভর্তি আছে ২৪ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৬জন শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। গত সাত দিনে ১১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া পুরুষ ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীর চাপ নেই।
শহরের মল্লিক হাঢি এলাকার সাহানা খাতুন বলেন, আমাকে শুধু পাঁচটি করে ওষুধ দিয়েছে। বাকি ওষুধ কোথায় পাবো।
হাসপাতালের বহিঃ বিভাগ ও ফার্মেসী বিভাগের ইনচার্জ রেবেকা সুলতানা বলেন, ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় রোগিদের কম করে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে চাহিদা মতো দেয়া হবে।

হাসপাতাল লাশ কাটা ঘরের দায়িত্বে থাকা ডোম জয় কুমার বলেন, পুরাতন ব্রেড, কাছি ও ছেনি দিয়ে লাশের কাটা ছেড়া করতে হয়। এতে সময় বেশি লাগে। নতুন যন্ত্রপাতির জন্য উর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ পাওয়া যায়নি। পেলে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসক সুমনা সরকার বলেন, সকাল আটটায় হাসপাতালে এসে ওয়ার্ড পরিদর্শন করতে হয়। তার পরে নতুন রোগির সমস্যা দেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এতে করে বহিঃর্বিভাগের চেম্বারে বসতে দেরি হয়। চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়ালে সঠিক সময়ে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসাক দিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব হবে না।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ এম এ মোমিন বলেন, জেলার সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩শ রোগিকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে একশ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন রোগি ভর্তি থাকে দুইশ জন। বাধ্য হয়ে বারান্দা ও মেঝেতে রাখা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে রোগিদের পরামর্শ দিতে দেরি হয়। ফলে চেম্বারের সামনে ভিড় করে রোগিরা।

হাসপতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় জানান, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন থেকে ১১ জন চিকিৎসক কম। একজন প্যাথলজিষ্ট দিয়ে চলছে প্যাথলজ, পরিচ্ছন্নতা কর্মি নাই ৩৬ জন। একজন চিকিৎসক ওয়ার্ডে রোগি ও বহিঃবিভাগে রোগি দেখছেন। ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হলে সমস্যা সমাধান হবে। শয্যা সংকটই বেশি। সরকারী ইডিসিএল চাহিদা মোতাবেক ওষুধ সরবরাহ না করায় রোগির পরামর্শ পত্রের চাহিদা মতো ওষুধ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। চিকিৎসক আর হাসপাতালে ওষুদের সরবরাহ কম থাকায় এমন অভিযোগ। তারপরেও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে দাবি এই কর্মকর্তার।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877